মহামারি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এখনো কোনো কার্যকর ওষুধ তৈরি হয়নি। তবে বেশ কিছু দেশে রেমডিসিভির ওষুধটির ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু এটি করোনাভাইরাস চিকিৎসার অব্যর্থ দাওয়াই এমন কোনো সনদ দেয়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এদিকে, করোনাভাইরাসের টিকা উদ্ভাবনে বসে নেই বিজ্ঞানীরা। শতাধিক ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্বের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী কাজ করে যাচ্ছেন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের সম্ভাব্য ভ্যাকসিন।
সংবাদমাধ্যম ফার্স্ট পোস্ট জানায়, এই প্রতিষেধকটির শেষ পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। তৃতীয় বা শেষ পর্যায়ের ট্রায়ালে ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপর এ প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হয়েছে। এই ভ্যাকসিনটিই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হবে বলে দাবি অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন গবেষণার প্রধান ড. সারাহ গিলবার্টের। তিনি এও বলেন, যারা চিকিৎসা ছাড়াই করোনামুক্ত হয়েছেন, তাদের চেয়ে বেশি সুরক্ষিত থাকবেন, যারা অক্সফোর্ডের প্রতিষেধক ব্যবহার করবেন।
ড. গিলবার্ট জানান, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সফল হয়েছে তাদের তৈরি প্রতিষেধক। একাধিক পরীক্ষায় এর প্রমাণও মিলেছে। শুধু তাই নয়, তাদের তৈরি এ প্রতিষেধক করোনার বিরুদ্ধে কয়েক বছর ধরে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হবে বলে দাবি করেন ড. গিলবার্ট।
অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের তৈরি করোনা প্রতিষেধকের সুরক্ষার মেয়াদ যে দীর্ঘমেয়াদি হবে আগেই জানিয়েছিলেন ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকার কার্যনির্বাহী প্রধান প্যাসকাল সরিওট। সরিওট জানান, এ প্রতিষেধক এক বছর পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিতে পারবে বলেই অনুমান করা হচ্ছে।
তবে অক্সফোর্ডের প্রতিষেধক বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়টি ভ্যাকসিনোলজি বিভাগের প্রধান ড. সারা গিলবার্টের দাবি, তাদের তৈরি করোনার প্রতিষেধক বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম। তিনি দাবি করেন, শরীরের সাধারণ প্রতিরোধ ক্ষমতার চেয়ে অনেকটাই শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়তে পারবে অক্সফোর্ডের এ প্রতিষেধক।
সম্প্রতি ব্রিটেনের হাউস অব কমন্স মন্ত্রিসভার সদস্যদের এ তথ্য জানান তিনি। কয় বছর করোনা থেকে এই ভ্যাকসিন সুরক্ষা দেবে এমন প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর দেননি সারাহ। বলেছেন, এই ভ্যাকসিনের বিস্তৃত প্রয়োগ ছাড়া এটি বলা সম্ভব নয়। তবে পূর্ববর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এই প্রতিষেধক বেশ কয়েক বছর রোগ প্রতিরোধ করবে। শরীরে এন্টিবডি তৈরিতে এটি খুবই কার্যকর হবে।
এদিকে ইতোমধ্যে অক্সফোর্ডের প্রতিষেধকের উৎপাদনের কাজ শুরু করে দিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিষেধক প্রস্তুতকারক সংস্থা ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। এ ভ্যাকসিনের উৎপাদনের কাজ শুরু হবে ব্রাজিলেও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার, ইংল্যান্ডে ১০ হাজার এবং ব্রাজিলে অন্তত দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপর এ প্রতিষেধকের চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়াল হবে। তবে সব কিছুর আগে প্রতিষেধকের সুরক্ষার বিষয়টিকেই জোর দিয়ে দেখছেন অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা। এ ক্ষেত্রে কোনো রকম তড়িঘড়ি করতে চাইছেন না তারা।
সূত্র, সময়